ইসলাম প্রচারে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার : বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আগমনের মূল উদ্দেশ্য ছিল মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কর্তৃক প্রেরিত দ্বিনের প্রচার ও প্রসার। নবী করিম (সা.)-এর যুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যুগে যুগে ইসলামের মনীষীরা এই গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে ধর্ম প্রচারে গণমাধ্যম ও প্রযুক্তির মাধ্যমে দাওয়াত মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
ফেসবুক :
আধুনিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমের একটি বিষয় হলো ফেসবুক। এর মাধ্যমে বিভিন্ন সময় প্রয়োজনীয় কথাবার্তা ও বার্তা আদান-প্রদান করা হয়। নতুন প্রজন্মের অন্যতম আকর্ষণ এই ফেসবুক। বর্তমানে এটি অত্যধিক জনপ্রিয় একটি প্রযুক্তি, যা উন্নত যোগাযোগ মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। মুসলমানরা যদি এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে পারে, তাহলে এটি ইসলাম প্রচারে নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটাবে।
মেইল :
নবী করিম (সা.)-এর যুগে দূরদেশে দাওয়াত প্রচারের মাধ্যম ছিল দূতের মাধ্যমে চিঠি প্রেরণ। এরপর পোস্ট অফিসের মাধ্যমে চিঠির দ্বারা বিভিন্নভাবে মুসলমানরা দূরদেশে ইসলামের দাওয়াত প্রচার করেছেন। বর্তমানে আধুনিক যুগে আমরা আরো একটি প্রযুক্তি সচরাচর ব্যবহার করে থাকি, সেটি হলো মেইল। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে একজন ব্যক্তি মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে ইসলামের দাওয়াত সহজেই পৌঁছে দিতে পারেন।
ইলেকট্রনিক মিডিয়া : আধুনিক প্রযুক্তির আরেকটি দিগন্ত হলো স্যাটেলাইট চ্যানেল। এর মাধ্যমে একজন দাঈ সারা বিশ্বের মানুষের মধ্যে ইসলামী দাওয়াত প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখতে পারেন।
ইউটিউবে আপলোড :
একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তির আরেকটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হলো ইউটিউব। দাওয়াত প্রচার ও প্রসারে আধুনিক প্রযুক্তি সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে। ইন্টারনেটে বিভিন্ন ভিডিও আপলোড ও ডাউনলোড করার উল্লেখযোগ্য একটি ওয়েবসাইট হলো ইউটিউব, যেখানে একজন ব্যক্তি যেকোনো অডিও ও ভিডিও আপলোড করতে পারে। এ বিষয়টিকে আমরা সবাই ইচ্ছা করলে ভালো ভালো কাজে ব্যবহার করতে পারি। কাজেই এটিও ইসলাম প্রচারের উল্লেখযোগ্য একটি মাধ্যম।
ইসলামিক প্রগ্রাম সম্প্রচার :
ইসলাম প্রচারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হলো বিভিন্ন প্রগ্রামের অডিও ও ভিডিও ধারণ করে তা বিভিন্ন গণমাধ্যমের দ্বারা সম্প্রচার করা।
ব্লগ :
যোগাযোগ মাধ্যমের একটি বৃহৎ মাধ্যম হলো ইন্টারনেট। এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বর্তমানে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি বিভিন্ন নামে ব্লগ তৈরি করেন। আর সেখানে তাঁরা নিজস্ব মতামত ও নানা লেখা পোস্ট করে থাকেন। আধুনিক কালে দেখা যায়, অনেক ইসলামী চিন্তাবিদ ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন নামে ব্লগ পরিচালনা করে থাকেন, যেখানে তাঁরা ইসলামপন্থী ও যুবসমাজকে ধ্বংসের পথ থেকে হিদায়াতের পথে আহ্বানের জন্য বিভিন্ন লেখা পোস্ট করেন। এটি নিশ্চয়ই একটি প্রশংসনীয় কাজ।
পত্রিকা ও সাময়িকী :
বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের দৈনিক, পাক্ষিক, দ্বিপাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকার মাধ্যমে ইসলামী দাওয়াতের বিভিন্ন কলাম প্রকাশের মাধ্যমে দাওয়াতের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপ্লব সাধন করা সম্ভব, যা অন্য কোনো মাধ্যমে সহজে সম্ভব হয়ে ওঠে না। কেননা পত্রপত্রিকা একেবারে নিম্নশিক্ষিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পর্যন্ত সর্বস্তরের লোক পড়ে থাকেন। কাজেই সেখানে যদি সত্যের দাওয়াত সম্পর্কিত কোনো লেখা প্রকাশ করা হয় তাহলে সেটি দাওয়াতের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে, যা সংঘাতময় বর্তমান সময়ে অনেক শূন্যতা পূরণ করতে পারে।
মোবাইলের মেমোরি কার্ডের মাধ্যমে :
আধুনিক যুগে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে মোবাইল অন্যতম। এটি বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় একটি প্রযুক্তি, যা বিশ্বের প্রতিটি ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা এটি ব্যবহার করে কোরআন তিলাওয়াত, বিভিন্ন ইসলামী গান, ওয়াজ, বক্তব্য ও সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের চিত্র ধারণ করে তা জনসমক্ষে প্রচার করতে পারি।
পরিশেষে বলা যায়, ধর্ম প্রচার মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত নবীদের একমাত্র মিশন। তাই বর্তমানে ইসলাম প্রচারে গণমাধ্যম ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে আরো বেশি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।