প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্তকরণ কিট উদ্ভাবনের পর ‘প্লাজমা ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এই কিট নিয়ে দৌড়ঝাপের মধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হন তিনি। এরপর থেকে নিজ বাসায় আইসোলেশনে ডা. জাফরুল্লাহ।
এর মধ্যে করোনার চিকিৎসায় নিয়েছেন প্লাজমা থেরাপিও। প্লাজমা থেরাপির কার্যকারিতা দেখেই ‘প্লাজমা ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তিনি। ২৯ মে, শুক্রবার সকালে দ্য ডেইলি স্টার’কে এসব কথা জানান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি ম্যাজিকের মতো কাজ করে। নিজে এটা নিয়ে তা বুঝতে পারছি। গতকাল (বৃহস্পতিবার) শারীরিকভাবে বেশ দুর্বলতা অনুভব করছিলাম। গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এসে এক ব্যাগ রক্ত নিতে হয়েছে। নিয়মিত কিডনি চিকিৎসার অংশ হিসেবে ডায়ালাইসিস করতে হয়েছে। কিন্তু, প্লাজমা থেরাপি নেয়ার পর চাঙ্গা হয়ে উঠেছি। প্লাজমা থেরাপি সব করোনা রোগীর পাওয়া দরকার। শুধু আমরা কয়েকজন সুবিধা পাবো, আর দেশের অন্যরা বঞ্চিত থাকবে, তা হতে পারে না।’
দেশের সব মানুষ প্লাজমা থেরাপি পাবে, এই ভাবনাটা এখনকার পরিস্থিতিতে কতটুকু বাস্তবিক- এর জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা খুবই সম্ভব। সব মানুষকে এই সুবিধা দেয়া আকাশকুসুম কল্পনা না। এটা বাস্তব। আমার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর প্রফেসর ডা. মহিউদ্দিন খান ফোন করে প্লাজমা থেরাপি নেয়া পরামর্শ দেন। এরপর আমি প্লাজমা থেরাপি নেই। প্রথমবার প্লাজমা থেরাপি নিয়েই বুঝতে পারি, করোনা রোগের জন্য এটা অত্যন্ত কার্যকর। এখন প্লাজমা ডোনেট করার জন্য দেশের মানুষকে বোঝাতে হবে। যদি সবাই মিলে উদ্যোগ নেয়া, বোঝানো হয়, তাহলে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে গেছেন ও শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে, তারা খুব সহজে ডোনেট করতে পারবে। আমাদেরকে এটাই এখন মানুষকে বোঝাতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এটার জন্য কিছু সরঞ্জামও লাগবে। আমরা এখন উদ্যোগ নিচ্ছি। প্রফেসর ডা. মহিউদ্দিন খান ঢাকা মেডিকেলে কাজ করছেন। শিশু হাসপাতালে কাজ করছেন ডা. হারুন। এটা অত্যন্ত মহৎ কাজ। তারা অত্যন্ত মহৎ কাজ করছেন। তাদের সেই কাজের অংশ হিসেবেই আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে একটি প্লাজমা ব্যাংক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি।’
ডা. জাফরুল্লাহ আরো বলেন, ‘এজন্য কিছু সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। কিছু অর্থও লাগবে। অর্থের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে গণস্বাস্থ্যের সম্পদের বিপরীতে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে নেবো। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো যদি উড়োজাহাজে করে আনি, তাহলে দুই সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে না। সবকিছু মিলিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যেই আমরা সরঞ্জাম এনে স্থাপন করে ফেলতে পারবো।’
তিনি আরো বলেন, দেশে প্লাজমা ডোনেট করার মতো প্রচুর মানুষ আছে। সবকিছু মিলিয়ে কাজটা অত কঠিন কিছু নয়। আমাদের যে সামর্থ্য-সক্ষমতা, তা দিয়েই দ্রুত এটা করে ফেলতে পারবো। এতে দেশের মানুষ খুব উপকৃত হবে।’
বাংলা/এনএস