প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) রোগীর সংখ্যা দেশে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। ফলে নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলো রোগীর চাপ সামলাতে পারছে না। তাই করোনার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের সংখ্যা বাড়াচ্ছে সরকার। তাই সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা দিতে বলা হয়। তবে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে হবে রোগীকে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত সোমবার এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন দেশের কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনা করে একই হাসপাতালে কভিড ও নন-কভিড রোগীদের পৃথক অংশে রেখে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রস্তাবনা অনুযায়ী, কভিড ও নন-কভিড রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৫০ শয্যা ও এর বেশি শয্যাবিশিষ্ট সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কভিড এবং নন-কভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা চালুর নির্দেশ প্রদান করা হলো।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ফোকাল পারসন ও অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান খান বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা ব্যয় আক্রান্ত ব্যক্তিকে বহন করতে হবে। করোনা চিকিৎসার সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। তাছাড়া আক্রান্তদের বেশিরভাগেরই সংক্রমণ মৃদু। তাদের তেমন ওষুধের প্রয়োজন হয় না। সুতরাং ব্যয় বেশি হবে না। শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য সমস্যা থাকলে আইসিইউর প্রয়োজন হবে। তবে এটি লাগবে সীমিতসংখ্যক মানুষের। এর বাইরে অন্যান্য চিকিৎসা ব্যয় খুব একটা বেশি নয়।
সরকারের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা চিকিৎসা নিয়ে সরকার দ্বৈতনীতি গ্রহণ করেছে। এর ফলে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা পাবেন। আর দরিদ্রদের উচ্চমূল্যে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। যাদের পকেটে টাকা নেই, তারা চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য আন্দোলনের সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব বলেন, এ ধরনের নির্দেশনা ভিত্তিহীন। জাতীয় দুর্যোগের সময় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিয়ে দ্বৈতনীতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। সরকার এটি করতে পারে না। প্রত্যেকটি মানুষের চিকিৎসা ব্যয় সরকারকেই বহন করতে হবে। দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে এ ধরনের আইনও রয়েছে। সুতরাং দুর্যোগকালে চিকিৎসার দায়িত্ব সরকার বেসরকারি খাতের ওপর ছেড়ে দিতে পারে না। বেসরকারি খাতকে যুক্ত করা হলে সরকারই তার দেখভাল করবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ফোকাল পারসন ও অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান খান জানান, বর্তমানে করোনা সংক্রমণের পিকটাইম চলছে। প্রতিদিন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়বে। আক্রান্ত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি এখানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে। এটি বিবেচনা করে ৫০ ও এর বেশি শয্যাবিশিষ্ট দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে সব মানুষকে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হবে।
চিকিৎসা ব্যয় সম্পর্কে হাবিবুর রহমান খান বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যয় রোগীকেই বহন করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনার পাশাপাশি অন্য রোগীদের চিকিৎসার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। যেসব হাসপাতাল করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া রোগী ভর্তি করতে চাচ্ছিল না, এই আদেশের ফলে তারা আর সেটি করতে পারবে না। একই সঙ্গে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাও নিশ্চিত হবে।
সূত্র : সমকাল
বাংলা/এনএস