ব্যান্ড, মিক্সড ও একক অ্যালবাম, স্টেজ শো- সব জায়গায় নব্বই দশকে দাপুটে বিচরণ ছিল বিপ্লবের। এলআরবি, নগরবাউলের পাশাপাশি হেঁটেছে প্রমিথিউস। সেই বিপ্লব এখন যুক্তরাষ্ট্রে ট্যাক্সি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
দেশের একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সঙ্গীতশিল্পী বিপ্লব জানান, নিউইয়র্কে তিনি এখন ট্যাক্সি সার্ভিসের কাজ করছেন। তিন বছর আগে নিউইয়র্কে গিয়ে তিনি প্রথম কাজ শুরু করেন আমেরিকান এয়ারলাইনসে। এক বছর পর গাড়ি কিনে ট্যাক্সি সার্ভিস শুরু করেন।
গেল তিন বছর ব্যান্ড প্রমিথিউসকে স্টেজ শো এবং টেলিভিশনের কোনো অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। কোথাও নেই বিপ্লব। ফেসবুকে মাঝেমধ্যে উঁকি দেন। বিপ্লব এখন পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুইন্সে থাকেন। বড় ছেলে আদিব সেখানকার একটি স্কুলে টেনথ গ্রেডে আর মেয়ে তটিনী নাইনথ গ্রেডে পড়ে। ছোট ছেলে অ্যারন পড়ে কিন্ডারগার্টেনে।
দেশের রক গানের জনপ্রিয় এই শিল্পী যুক্তরাষ্ট্রে ট্যাক্সি চালান- ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা শুনলেই হয়তো চমকে যেতে পারেন। তবে বিপ্লব এতে মোটেও বিব্রত নন। বিপ্লব বলেন, ‘আমি ট্যাক্সি জবে আছি, বলতে সংকোচ বোধ করি না। আমি তো চুরি করছি না। মানুষকে সেবা দিচ্ছি, বিনিময়ে টাকা নিচ্ছি। আমেরিকা আসার পর আমার অনেক বড় অভিজ্ঞতা হয়েছে। বিদেশ বলতে আমরা দেশে বসে যা বুঝি, বিদেশ আসলে মোটেও তা না। আমেরিকার লাইফ আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে, অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, যা আমার পরবর্তী জীবনে কাজে দেবে।’
বিপ্লব গান-বাজনা থেকে দূরে সরে যাননি। বললেন, ‘আমার অস্তিত্বে গান।’ নতুন গান লিখছেন। নতুন গানের সুরও তৈরি করছেন। গেল তিন বছরে ৫টি নতুন গিটার কিনেছেন। ৪ বছর বয়সী ছোট ছেলে অ্যারনের জন্যও গিটার কিনে রেখেছেন। কাজের ফাঁকে বিপ্লব প্রায় দিনই গিটার নিয়ে প্র্যাকটিসে বসে পড়েন। জানিয়ে রাখলেন, সৃষ্টিকর্তা যদি শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখে, ব্যান্ডের সবাইকে নিয়ে আবার গানের ময়দানে নামবেন। তবে কবে, তা এই মুহূর্তে বলতে পারছেন না। বললেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার পর আবার সাড়ম্বরে গান নিয়ে মেতে থাকবেন।’
যুক্তরাষ্ট্রে দুই ছেলের সাথে বিপ্লব। ছবি সংগ্রহীত
বিপ্লব নিউইয়র্কে থেকেও মাঝেমধ্যে কনসার্টে গান করেন। তবে বেশির ভাগ স্টেজ শো নিউইয়র্কের বাইরে করা হয় বলে জানান তিনি। বললেন, ‘ব্যাটে-বলে মিললে তখনই প্রোগ্রাম করি।’
যুক্তরাষ্ট্রে ট্যাক্সি সার্ভিসকে কেন বেছে নিলেন? অন্য কোনো কিছু করার সুযোগ কি ছিল না? বিপ্লব বলেন, ‘আমি স্বাধীনমতো কাজ করছি। খবরদারি করার কেউ নাই। এখানে অন্য কাজ করব, আমার সেই সুযোগটাও তো নেই। স্মার্ট কিছু করতে হলে এখানকার পড়াশোনা লাগে। অভিজ্ঞতা লাগে। দেশের মাস্টার্স ডিগ্রি দিয়ে এ দেশে স্মার্ট কিছু করা যাবে না। এদিকে আরও পড়াশোনা করার সময় নেই, এখন পড়াশোনা করবে আমার ছেলেমেয়েরা। ওদেরকে তৈরি করছি। আমি হয়তো বিষয়টা না বললেও পারতাম, কিন্তু এসব লুকোচুরি আমার মধ্যে নেই। তাই ট্যাক্সি চালানোর বিষয়টিও লুকাইনি।’