বিদেশে অর্থ পাচারের কথা নতুন নয়। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে সেই অর্থের পরিমাণ এখন পাহাড় সমান। দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশের নামে রয়েছে ৬১ কোটি ৩২ লাখ সুইস ফ্রাঁ। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ফ্রাঁ ৯০ টাকা) যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৫ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা।
২০১৮ সালে ছিলো ৬২ কোটি ২৫ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা প্রায় ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। যা আগের বছরের তুলনায় খুব সামান্য কম। সুইস ব্যাংকে থাকা এই অর্থের একটি অংশ পাচার হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হয়। তবে পাচারের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। তাই আমানত হিসেবে কার কত অর্থ আছে সেটাও জানা যায় না।
২৫ জুন, বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড-২০১৯’ নামের এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনের দেশটির ২৪৬টি ব্যাংকের পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়।
এতে দেখা গেছে, বাংলাদেশের নামে ওই দেশটির ব্যাংক ব্যবস্থায় মোট দায় ৬০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ। এর সঙ্গে সম্পদ ব্যবস্থাপকের মাধ্যমে আরো ১ কোটি সুইস ফ্রাঁ বিনিয়োগ হিসেবে রয়েছে। মোট দায়ের মধ্যে গ্রাহকের সরাসরি আমানত রয়েছে প্রায় ২ কোটি ফ্রাঁ বা ১৮০ কোটি টাকা। এছাড়াও দেশটির ব্যাংক ব্যবস্থায় বাংলাদেশের পাওনা এবং তাদের দায়ের পরিমাণ ৫৮ কোটি ৩২ লাখ ফ্রাঁ।
আরো দেখা গেছে, সার্বিকভাবে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক ব্যবস্থায় বিদেশি গ্রাহকের আমানত কমেছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে সার্বিকভাবে অন্য দেশগুলোর প্রতি দায় বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। ভারতের নামে সুইস ব্যাংকে দায় রয়েছে ৮৯ কোটি ফ্রাঁ, যা ২০১৮ সালে ছিল ৯৪ কোটি ফ্রাঁ। অন্যদিকে পাকিস্তানের কাছে দায় ২৭ কোটি থেকে কমে ৩৬ কোটি ফ্রাঁতে নেমেছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান যদি নিজের বদলে অন্য দেশের নামে অর্থ গচ্ছিত রেখে থাকে তাহলে তা এই হিসাবের মধ্যে আসেনি। একইভাবে সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা মূল্যবান শিল্পকর্ম, স্বর্ণ বা দুর্লভ সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমান হিসাব করে এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অনেক দেশের নাগরিকই মূল্যবান এসব সামগ্রী সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকের ভল্টে রেখে থাকেন।
এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক ব্যবস্থায় থাকা অর্থকে একটি অংশ পাচার বলে ধারণা করা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের অনেকেই বিদেশে বৈধভাবে আয় করে দেশে আনেন না। বাণিজ্য প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা একটি অংশ হয়তো দেশে না এনে সেখানকার ব্যাংকে রেখে দেয়।
তিনি আরো জানান, দেশে অর্থ পাচার ও দুর্নীতিবিরোধী আইন আছে এবং প্রতিরোধের জন্য প্রতিষ্ঠান আছে। তারপরও অর্থ পাচার ঘটছে। দুর্নীতিবিরোধী জিরো টলারেন্সের কথা শুধু মুখে না বলে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের মাধ্যমে কাজে প্রমাণ করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের নামে থাকা অর্থের বেশিরভাগই বাণিজ্যকেন্দ্রিক। এ দেশের ব্যাংকগুলোর পাওনা হিসেবে যা উল্লেখ করা হয়। গ্রাহকের আমানত হিসাবে যে অর্থ থাকে তার মধ্যে বিদেশে চাকরি করেন এমন বাংলাদেশিদের অর্থও রয়েছে। গ্রাহক আমানতের একটি অংশ পাচার হতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়।
বাংলা/এনএস
আপনার মন্তব্য লিখুন