রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে কাঞ্চন ব্রিজ থেকে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি পরিচিত ৩০০ ফিট সড়ক নামে। দিন দিন এই এলাকাটি হয়ে উঠছে অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে। হেন অপরাধ নেই যা এখানে ঘটছে না। ডাকাতি-ছিনতাই নিত্যদিনের ঘটনা, আর হত্যার পর মরদেহ ফেলে দেয়ার কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে এলাকাটি।
নির্জন এই এলাকাটিতে সড়ক বাতি ও সিসি ক্যমেরা না থাকায় সুযোগে অপরাধী চক্র একের পর এক অপরাধ ঘটিয়ে চলেছে বলে দাবি করেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, প্রায়ই এ এলাকা থেকে ছিনতাই-ডাকাতির সংবাদ পাচ্ছেন তারা।
সেই সাথে ওই এলাকা থেকে প্রচুর মরদেহ উদ্ধার করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশের দাবি, অন্য এলাকা থেকে ধরে এনে হত্যা করে ফেলে যাওয়া হচ্ছে এখানে।
গত ১৭ জুন রাজধানীর দক্ষিণখানের সোনিয়া আক্তারের স্বামী হারুন অর রশীদ নিখোঁজ হন। পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে স্বামীর মরদেহ শনাক্ত করেন সোনিয়া।
পুলিশ জানায়, সিসি ক্যামেরার তথ্য অনুযায়ী ওইদিন রাত আটটার দিকে মহাখালী ছিলেন হারুন। এর ঘণ্টা দুয়েক পর সাড়ে ১০টার দিকে তিনশ’ ফিট থেকে উদ্ধার হয় তার মরদেহ।
সবশেষ ১৯ জুন, শুক্রবার ওই এলাকা থেকে এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আগের মাসে আরো ৪টি মরদেহ উদ্ধার করা হয় তিনশ’ ফিট এলাকা থেকে।
পুলিশ জানায়, ওই এলাকায় সক্রিয় রয়েছে বেশ কয়েকটি অপরাধী চক্র। তিনশ’ ফিট দিয়ে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষকে তারা সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারে যাত্রী হিসেবে উঠিয়ে সুবিধাজনক জায়গায় নিয়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে সড়কে ফেলে যায় তাদের। কেউ বাধা দিলে হত্যার শিকারও হতে হয় তাকে!
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘তিনশ ফিট বা এ অঞ্চলে মাঝে মাঝে রাস্তার লাইট গুলো জ্বলে না এবং এই বিস্তীর্ণ গুরুত্বপূর্ণ ভিআইপি রোডে এখানে অনেকাংশে সিসি ক্যামেরা নেই। এই কারণে টেকনোলজিকাল অনেকগুলো ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় আমাদের।’
আন্তরিকতা এবং পূর্ব অভিজ্ঞতা আলোকে এ মামলার (হারুন হত্যা) রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে তিনশ’ ফিট এলাকার অপরাধে জড়িত একটি চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায় পুলিশ। তাদের দুইজন ইতোমধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। ওই চক্রের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন সময়ে ১২ জনকে হত্যার কথাও স্বীকার করেছে।
করোনাভাইরাসের এই মহামারীর সময়ে ফের ওই এলাকায় অপরাধী চক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এই চক্রটিকে ধরতে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সূত্র।
বাংলা/এসএ/