করোনাভাইরাস মহামারীজনিত কারণে দালালদের অর্থ প্রদান করতে না পারায় বাংলাদেশের হাজার হাজার যৌনকর্মী অভুক্ত অবস্থায় রয়েছে। এমনকি এসব যৌনকর্মীদের অনেকেই নির্যাতনের শিকারও হচ্ছেন। দাতব্য সংস্থার বরাত দিয়ে এমন খবর প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ যৌনকর্মী রয়েছে। দাতব্য সংস্থাগুলোর অনুমান অনুসারে ধারণা করা হচ্ছে, করোনার বিস্তার রোধে লকডাউন শুরুর তিন মাস পরে ১০ জনের মধ্যে সাত জন এখন শুধু বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে।
আরো বলা হয়, যদিও যৌন কাজ বাংলাদেশে আইনত বৈধ, তবুও বেশিরভাগ সংখ্যক নিবন্ধিত পতিতালয়ের বাইরে রাস্তায় বা ব্যক্তিগত আবাসস্থলেও এরা যৌন কাজে লিপ্ত হয়। জাতিসংঘের মতে, এর অর্থ হচ্ছে এসব যৌনকর্মীরা নির্যাতনকারীদের হাত থেকে খুব কম সুরক্ষা পেয়ে থাকে।
যৌনকর্মীদের বাচ্চাদের স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা লাভে সহায়তা করে থাকে দাতব্য সংস্থা লাইট হাউজ। সংস্থাটির উপ-প্রধান নির্বাহী কেএসএম তারেকের উদ্ধৃতি দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌনকর্মীদের বেশিরভাগ এখন খেতে পাচ্ছে না এবং সহিংসতা বা হয়রানির শিকারও হচ্ছে।
লাইট হাউজের ওই কর্মকর্তার মতে, ‘জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে আমরা প্রতি সপ্তাহে সাত থেকে ১০ টি অভিযোগ পেয়েছি। তবে মে মাসের কয়েকটি সপ্তাহে আমরা যৌনকর্মীদের কাছ থেকে ২০০ এর বেশি অভিযোগ পেয়েছি।’
প্রাক্তন যৌনকর্মী রিনা আক্তার, যিনি এখন তাদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করছেন। তিনি ঢাকায় একটি জরিপ চালিয়ে দেখেছেন, প্রায় ১৫০ জন যৌনকর্মীর মধ্যে কমপক্ষে ৩৫ জন দালাল বা অপরিচিত ব্যক্তির দ্বারা মারধরের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে এখন বাংলাদেশে লকডাউন প্রায় তুলে নেয়া হলেও যৌনকর্মীরা তাদের পেশা শুরু করতে পারেননি।
বাংলাদেশ সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক আলিয়া আক্তার লিলি বলেছেন, ‘ভাইরাসের কারণে গ্রাহকরা ভয় পেয়েছেন এবং দেশের ৭০ শতাংশ যৌনকর্মী এখন বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছেন।’
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরকার বলেছে তারা যৌনকর্মীদের সহায়তার উপায় খুঁজতে চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলছে।
সরকার লকডাউন চলাকালীন নিবন্ধিত পতিতালয়গুলোতে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে এবং বুধবার বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম দৌলতদিয়া পতিতালয়ে ১ হাজার ৩০০ যৌনকর্মীর জন্য ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করেছে।
সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক বেগম নাজমা খাতুনের বরাতে পত্রিকাটি লিখেছে, ‘আমরা জানি যে তারা আর্থিক কষ্টে রয়েছেন। এনজিওর সাথে আমাদের বৈঠক হয়েছে এবং আমরা তহবিল পাওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা আমাদের অফিসের মাধ্যমে খাবার বিতরণ করছি।’
যদিও আখির (পেশাগত ছদ্ম নাম) বরাতে দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি ইতোমধ্যে নিজের গহনা বন্ধক রেখেছেন। সম্প্রতি তার দালাল তাকে পিটিয়েছে। কারণ তাকে তিনি আয়ের টাকা দিতে পারেননি।
বাংলা/এনএস
আপনার মন্তব্য লিখুন