ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন দেশের জনপ্রিয় নাট্য অভিনেতা শাহানাহ খুশি। তবে তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেও মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছেন। করোনা মাহামারীতে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি শুরু হওয়া নাটকের শুটিংয়ে যাওয়ার সময় এই দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।
ঈদের নাটক ‘নসু ভিলেন’র দৃশ্যায়নের জন্য গত বৃহস্পতিবার পুবাইল যাওয়ার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান খুশি। নিজের দেয়া এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এই তথ্য জানান। ওই পোস্টে তিনি তার দুর্ঘটনার শিকার গাড়িটিরও ছবি দেন।
ওই পোস্টে শাহানাজ খুশি লিখেছেন, ‘চার মাস পর করোনার মধ্যে প্রথম শুটিংয়ে যাচ্ছি, খারাপ লাগা নিয়ে পরশু এমন একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম। নাহ, আমাকে অদৃশ্য করোনা এখনো ছোঁয়নি, আমাকে মৃত্যুর দুয়ারে নিয়েছিল দৃশ্যমান ভয়াবহ এ পরিবহন সেক্টরের অরাজকতা! এটা আমার গাড়ী। এই গাড়ীর মধ্যে আমি ছিলাম। একেবারেই অলৌকিক কিছু না হলে আমার বাঁচার কথা নয়! আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমি বেঁচে আছি, ভাল আছি! কত বড় অরাজকতার মধ্যে আমরা বাস করছি তা সবাই জানি।’
তিনি আরো লিখেছেন, ‘আজ স্বাস্থ্যখাত সামনে এসেছে বলে সাহেদদের মত অসংখ্য অসংখ্য কালপিট সামনে আসছে। পরিবহন খাতটা দীর্ঘকাল হলই এমন। প্রতিদিন এমন অসংখ্য দুর্ঘটনায় শেষ হচ্ছে। হাজারো পরিবারে খালি হচ্ছে মায়ের কোল, সন্তানের বুক। কিন্তু কোনো প্রতিকার নেই। স্বাস্থ্যখাতের চেয়েও আরো দুর্গম, অন্ধকার ও অন্যায়ে ঠাসা এই পরিবহনখাত। ছবিতে যে বিশাল আকারের কার্গো, এটিই গাড়ীর উপর ওঠেছে, ঠেলে নিয়ে পেছনে থামা ট্রাকের সাথে চেপে ধরছে, সেটি চালাচ্ছিলেন ১৬-১৭ বয়সের একজন হেলপার। ড্রাইভার যিনি, উনিও তাই। গুরুত্বপুর্ন কথা হল, ড্রাইভারের কোনো লাইসেন্স নাই।’
খুশি আরো লিখেছেন, এমন নাকি চলে, কোন সমস্যা হয় না! আমি আসলে পুরা সেন্সে ছিলাম না, কিছু কিছু কথা আমি ভুলতে পারছি না। পুবাইল পুলিশ ও আমার শুটিংয়ের ছেলেরা, আমার বাসার মানুষ সবাই চলে এসেছে। আমি তখন থর কম্প একটা মাংস পিন্ড কেবল। কেউ একজন ক্ষতিপুরণের কথা বলায় ড্রাইভার বলছে,‘মানুষ মাইরালায় ট্যাহা লাগে না, বাঁইচ্যা আছে, তাও ট্যাহা লাগবো।’ ‘সামনের টেম্পোর ৬ জনরে বাঁচান্যার লাই ২ জনরে মাইরা দেয়া কুনু বিষয় না।’ এমন অসংগ্ন কথা বার্তা।’
তিনি আরো লিখেছেন, ‘মীরের বাজার পুলিশ বক্সে দায়িত্বে থাকা পুলিশ এবং থানা পুলিশ ভাইয়েরা যা করেছেন আমার জন্য তা জীবনে কোনদিন ভুলবো না। সেই সাথে জেনে এসেছি তাদের নেতৃস্থানীয়দের এবং পরিবহন লিডার বলয়ের কাছে অসহায়ত্বের কথা।’
খুশি লিখেছেন, ‘আমি কাল থেকে অপ্রকৃতস্থ প্রায়! খেতে পারছি না, চোখ বন্ধ করতে পারছি না, আমার ছেলে দুইটা এ ভয়াবহতায় এলোমেলো, বাচ্চা ছেলেটা রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছে। আমি কিছু বুঝতে চাই না, আমি আমার দেশের প্রতি, আইনের প্রতি শতভাগ শ্রদ্ধা এবং দায়িত্ববান। আমার এবং আমার পরিবারের দ্বারা দেশের বিন্দু পরিমাণ সম্মান ক্ষুন্ন হয় নাই। বরং দেশের মর্যাদা রক্ষায় আমরা বদ্ধ পরিকর। আমি শুধু আমার জীবনের নিরাপত্তা চাই মাননীয়।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে খুশি লিখেছেন, ‘জীবনের এত যুদ্ধ, এত শিক্ষার পর একজন অশিক্ষিত নেশাগ্রস্ত লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভারের হাতে জীবন দিতে রাজী নই। দয়া করে আইন সংশোধন করে, আমাদের জীবনকে নিরাপদ করুন। আমি আমার সন্তানকে দায়িত্ববান নাগরিক করবার দায়িত্বভার নিষ্ঠার সাথে পালন করছি। আপনারা আমাদের জীবন, পথকে নিরাপদ করুন মহামান্য। আমার পরিবার এবং আমি দাফনের জন্য টাকা আর ক্ষতিপুরণের কয়েক লাখ টাকা চাই না। আমরা ভর্তা ভাত খেয়ে, একে অপরের জীবিত সুস্থ সান্নিধ্যে বাঁচতে চাই।’
আপনার মন্তব্য লিখুন