করোনায় বিশ্বের কয়েক লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছেন প্রায় ৬ লাখের মতো মানুষ। যারা বেঁচে গেছেন, করোনামুক্ত হয়েছেন তাদের অনেকেই এখন ভুগছেন নানারকম শারীরিক ও মানসিক জটিলতায়। স্ববাবিকভাবে কাজকর্ম করতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে। স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া থেকে শুরু করে নানা ধরণের মারাত্মক শারীরিক অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। অনেক অসুখ পরবর্তী উদ্বিগ্নতায়ও ভুগছেন।
দেখা যাচ্ছে তিন মাস পরেও ৪২ বছর পেসকারোলো এখনো শ্বাসকষ্টের অভিজ্ঞতা হচ্ছে। তিনি বলছেন, ‘বাড়ি ফিরে আসার কয়েক সপ্তাহ পরেও আমি কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছিলাম না। আমি যদি একটু হাঁটাচলা করতাম তবে এভারেস্ট পর্বতে আরোহণের মতো কষ্ট হতো। আমার কথা বলতেও কষ্ট হতো। আমি খুব চিন্তিত ছিলাম।’
জেসোয়ার একটি পুনর্বাসন ক্লিনিকে এখন কয়েক ডজন প্রাক্তন কোভিড রোগীর সাথে চিকিৎসারত পেসকারারোলো বলছেন তিনি এখন অবস্থার কিছুটা অগ্রগতি দেখতে শুরু করেছেন।
ইউরোপের হাসপাতালগুলোতে এখন উদ্বেগজনক সংখ্যায় রোগীর ভিড় নেই ঠিকই তবে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা কোভিডে ভুগেছেন বা সন্দেহভাজন কোভিড রোগী ছিলেন তারা কয়েক সপ্তাহ বা মাস পার করে এসেও জানিয়েছেন তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেনি।
এজন্য যুক্তরাজ্যে ‘দীর্ঘ কোভিড’ নামে ভুক্তভোগীরা অনলাইনে তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছেন। যেহেতু ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে তেমন কিছুই জানা যায় না ফলে তারা তাদের অভিজ্ঞতা এখানে তুলে ধরছেন।
ইতোমধ্যে, ইউরোপ ও ইতালির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, করোনাভাভাইরাস মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্থ এ দুটি ইউরোপীয় দেশে কোভিড -১৯ থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষদের জন্য পুনর্বাসনের পরিষেবা দেওয়া শুরু করেছে।
এগুলো বিস্তৃত হওয়া দরকার। কারণ যেহেতু এখন গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে করোনাভাইরাসটি একটি বহু-সিস্টেমের রোগ যা কেবল ফুসফুসকেই নয়, কিডনি, যকৃত, হার্ট, মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্র, ত্বক এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
জেনোয়া পেরেসারোতে অংশ নেওয়া কোভিড-পরবর্তী পুনর্বাসন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. পিয়েরো ক্লাভারিও বলেছেন, তার দল মে মাসে জেলাগুলোর চিকিৎসা করা কয়েক শতাধিক কোভিড-বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ শুরু করেছিল। এর মধ্যে তারা এখন অবধি অর্ধশতাধিক রোগীকে দেখে এসেছেন।
তিনি বলছেন, ‘তারা কেবলমাত্র আইসিইউতে ভর্তি ছিলো এমন নয়; বরং কোভিডের কারণে হাসপাতালে তিন দিনের বেশি সময় ছিলো না এমন রোগীরাও ছিল। আমরা স্ট্যান্ডার্ড ভাইরোলজিকাল এবং পালমোনারি পরীক্ষার দিকগুলো অনুসন্ধান করেছেন।’
ক্লাভারিও বলেছেন তার টিম ৫৫ জনকে দেখেছেন। তিনি বলেছেন, এর মধ্যে আট জনকে ফলো-আপের দরকার নেই এবং তাদের কোনো জটিলতা নেই। তবে ৫০% এর মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে ১৫% পিটিএসডি (পোস্ট ট্রমামেটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার) তে ভুগছে।’
ক্ল্যাভারিও বলেছেন, প্রতিটি রোগীকে মূল্যায়নের জন্য চিকিৎসক, কার্ডিওলজিস্ট, স্নায়ু বিশেষজ্ঞ, মনোবিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকদের একটি দল পরীক্ষা করেছে।
তিনি বলেছেন, ‘আমাকে সবচেয়ে অবাক করে দেওয়ার বিষয়টি হলো যেসব রোগীরা আইসিইউতে ছিলেন না তারাও অত্যন্ত দুর্বল। কার্ডিওলজিকাল বা পালমোনারি সমস্যার কোনও প্রমাণ নেই। তবু তারা সিঁড়ি ভেঙে হাঁটতে সক্ষম নন।’ তিনি আরো বলেন, ‘বেশিরভাগই গুরুতর পেশী দুর্বলতায় ভুগছেন।’
৫২ বছর বয়সী একজন নার্স কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে এসে আবার কাজে যোগ দিয়েছিলেন। তবে তিনি শারীরিক কারণে ডিউটি করতে পারছেন না।
তবে তিনি আশার কথা শুনিয়েছেন এভাবে যে ইতিবাচক বিষয় হলো তাদের জিমে অনুশীলনের পরে বেশিরভাগই দক্ষতার সাথেই এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারছেন।