কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে সাবেক মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে হত্যা মামলায় টেকনাফ মডেল থানার সদ্য প্রতাহারকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাস ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আইসি মো. লিয়াকতসহ ৯ পুলিশ সদস্য যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন।
এর আগে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩, টেকনাফের বিজ্ঞ বিচারক তামান্না ফারহার আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া। পরে আদালত সেটি টেকনাফ থানাকে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন। এছাড়া মামলার তদন্তের দায়িত্ব র্যাব-১৫ এর অধিনায়ককে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, মামলাটি রাত ১০টায় থানায় নথিভুক্ত হয়েছে। আইন অনুসারে এ ধরনের মামলায় আলাদা করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেয়ার প্রয়োজন হয় না। এসব মামলা নথিভুক্ত হলেই আসামিদের গ্রেপ্তারের ক্ষমতা রাখেন তদন্ত কর্মকর্তা। সে হিসেবে যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন টেকনাফ থানার প্রত্যাহারকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ মামলার আসামি বাকি ৯ পুলিশ সদস্য।
এদিকে আদালত সূত্র জানায়, আদালতের আদেশ মতে দায়ের করা মামলাটি বুধবার রাতেই টেকনাফ মডেল থানায় নিয়মিত হত্যা মামলা হিসেবে রুজু করা হয়েছে। মামলা নম্বর সিআর: ৯৪/২০২০ ইংরেজি (টেকনাফ)।
জামিন অযোগ্য ধারায় রুজু হওয়া এ মামলায় এজাহারভুক্ত ওসি প্রদীপ ও আইসি লিয়াকত ছাড়াও বাকি আসামিরা হলেন, এসআই নন্দলাল রক্ষিত ও টুটুল, এএসআই লিটন মিয়া এবং কনস্টেবল সাফানুর করিম কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন ও কনস্টেবল মো. মোস্তফা।
প্রসঙ্গত, ৩১ জুলাই, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়ায় মেরিন ড্রাইভ সড়কে একটি চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান (৩৬) নিহত হন।এ বিষয়ে পুলিশ দাবি করেছিল, ওই সেনা কর্মকর্তা তার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে টেকনাফ থেকে কক্সবাজার আসছিলেন। এসময় তার গাড়িতে আরো একজন ছিলেন। মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশি করতে চাইলে তিনি বাধা দেন। এই শুরু হয় তর্ক-বিতর্ক। এক পর্যায়ে সেনা কর্মকর্তা তার কাছে থাকা পিস্তল বের করলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে ওই সেনা কর্মকর্তা গুরুতর আহত হন। পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আজ শনিবার সকালে নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
তবে পুলিশের এমন ভাষ্য নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ওঠে। ঘটনার প্রত্যক্ষর্শী নিহত সাবেক সেনা কর্মকর্তার এক সঙ্গীর বক্তব্যের সঙ্গে পুলিশের ভাষ্যের কিছুটা অমিল রয়েছে বলে একটি সূত্র জানায়। এমন প্রেক্ষাপটে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় সেখান থেকে ২০ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ২ জুলাই, রবিবার এই প্রত্যাহার আদেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বোন শারমিন শাহরিয়া তার পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করেছেন হয়েছে। এ মামলায় টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া চেকপোস্টের ইনচার্য লিয়াকত হোসেনসহ ৯ জনকে আসামী করা হয়েছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টেকনাফ উপজেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারহার আদালতে মামলাটি দাখিল করা হয়।