অবেশেষে কক্সবাজারের চকরিয়ায় ‘গরু চুরি’র অভিযোগে নির্যাতনের পর জেলে যাওয়া নির্যাতিত নারী ও তার দুই মেয়ে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। গতকাল ২৪ আগস্ট, সোমবার সন্ধ্যার পর কারামুক্তি লাভ করেন তারা।
এরপর ওই নারী দাবী করেন, তাদের জিনিসপত্র লুট করার পর ‘গরু চুরি’র ঘটনা সাজায় কিছু লোক। এতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইন্ধন জোগান। এ ঘটনায় শিগগিরই মামলা করারও ঘোষণা দেন ওই নারী।
কক্সবাজার কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া নির্যাতিত এই নারীকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখা যায়। তিনিসহ তার দুই মেয়ের চেহারায় তখনো ছিল ভীতি-আতঙ্কের ছাপ।
পরে ঘটনার বর্ণনা দেন চট্টগ্রামের পটিয়ার বাসিন্দা ওই নারী। তিনি জানান, শুক্রবার চকরিয়ার হারবাং পহরচাঁদা গ্রামে আত্মীয় বাড়িতে যাচ্ছিলেন তারা। পথে একদল লোক তাদের সব টাকা-পয়সা ও জিনিসপত্র কেড়ে নিয়ে ‘গরু চুরি’র অপবাদ দিয়ে নির্যাতন চালায়।
পরে তাদের দড়ি দিয়ে বেঁধে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদে নেবার পর চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম আরেক দফা মারধর করেন।
এ ঘটনার জন্য তিনি অভিযুক্ত চেয়ারম্যান ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে শিগগিরই মামলা করবেন বলেও জানান।
মা ও দুই মেয়ের কারামুক্তি মিললো একই পরিবারের আরেক সদস্য এখনো কারাগারে বন্দি আছেন।
কক্সবাজারের চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাজিব কুমার দেব দুপুরে মা ও দুই মেয়ের জামিন মঞ্জুর করেন। বাকি দুজনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়।
এদিকে ঘটনাটি হাইকোর্টের নজরেও এনেছেন আনেন এক আইনজীবী। নির্যাতিতদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
এর আগে গত ২১ আগস্ট চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের একটি গ্রামে গরু চুরির অভিযোগে মা-মেয়েকে রশিতে বেঁধে নির্যাতন করেন স্থানীয় লোকজন। ওই দুই নারীর সঙ্গে ছিলেন আরো তিনজন। পরে তাদের কয়েকটি গ্রাম ঘুরিয়ে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম দ্বিতীয় দফায় তাদের মারধর করেন। তাদের শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে চেয়ারম্যান তাদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। পুলিশ তাদের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করান।
ওই রাতেই গরু চুরির অভিযোগ এনে তিন নারীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় মামলা করেন মাহবুবুল হক নামের এক ব্যক্তি। পরের দিন শনিবার আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়।
এছাড়া রশিতে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় ছবি ও ভিডিও দেখে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই তিনজন হলেন- নজরুল ইসলাম (২৭), জসিম উদ্দিন (৩২) ও মো. নাছির (২৮)।
নজরুল গরু চুরি সংক্রান্ত মামলার বাদী মাহবুবুল হকের ছেলে আর জসিম ও নাছির ওই মামলায় সাক্ষী ছিলেন।