প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারী মোকাবেলায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশেগুলোর মধ্যে সব চেয়ে খারাপ অবস্থানে বাংলাদেশ। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশেই করোনা পরীক্ষার হার সবচেয়ে কম।
আবার, পরীক্ষার হারের কম হলেও শনাক্তের হার বাংলাদেশেই বেশি। মাত্র ৬টা নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে একজন করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এক্ষেত্রেও খারাপ অবস্থানে বাংলাদেশ।
এই অঞ্চলের মধ্যে করোনা সংক্রমণের দিক দিয়ে শীর্ষ তিন নম্বরে অবস্থানে বাংলাদেশ। এর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এক লাখ ৭৫ হাজার ৪৩৪ জন করোনায় আক্রান্ত। এর মধ্যে মারা গেছেন চার হাজার ৯৮৩ জন। এর পরেই রয়েছে পাকিস্তান। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ৬৬ হাজার ৪৫৭ জন এবং মারা গেছেন এক হাজার ৩৯৫ জন। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশে আক্রান্ত হয়েছে ৪৪ হাজার ৬০৮ জন। এবং মৃত্যুর সংখ্যা ৬১০ জনে দাঁড়িয়েছে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের ৩০ মে, শনিবারের তথ্য মতে, এই আটটি দেশের মধ্যে জনসংখ্যার বিচারে (প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে) করোনার পরীক্ষার হার এই তিন দেশেই কম। প্রতি ১০ লাখে ভারতে পরীক্ষা করা হয় দুই হাজার ৬১৯ জনের। পাকিস্তানে দুই হাজার ৪১৩ জনের এবং বাংলাদেশে পরীক্ষা করা হয় এক হাজার ৮০৫ জন।
এই অঞ্চলে পরীক্ষার হারের দিকে দিয়ে সবচেয়ে ভালো করে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ভুটান। দেশটি প্রতি ১০ লাখে ২১ হাজার ৪৪৪ জনের পরীক্ষা করেছে। একই সঙ্গে তাদের আক্রান্তের হারও খুব কম, মাত্র ৩৩ জন। এছাড়াও এখন পর্যন্ত করোনায় কোনো মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেনি এই দেশটিতে।
নেপালে পরীক্ষার এই হার পাঁচ হাজার ৫৭৫ জন। দেশটিতে সর্বশেষ করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৪০১ জন এবং মারা গেছেন ছয় জন।
শ্রীলঙ্কায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ৫৬৩ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ১০ জন। দেশটিতে প্রতি ১০ লাখে করোনা পরীক্ষার হার দুই হাজার ৯০৬ জন- এই হার ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের চেয়েও বেশি।
ভিয়েতনামে প্রতি ১০ লাখে দুই হাজার ৮২৭ জন নাগরিকের করোনার পরীক্ষা করা হয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৩২৮ জন এবং কোনো মৃত্যুর খবর নেই। আর থাইল্যান্ডে পরীক্ষার এই হার পাঁচ হাজার ৩৮০ জন। আর করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তিন হাজার ৭৭ জন এবং মারা গেছেন ৫৭ জন।
এদিকে পরীক্ষার হারের বিপরীতে শনাক্তের হারও বাংলাদেশে বেশি। ছয়টি নমুনা পরীক্ষায় একজন শনাক্ত হয়। পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্ত হওয়ার হারে পাকিস্তান ও ভারত এই অঞ্চলে সবার নিচে, কিন্তু বাংলাদেশের উপরে। পাকিস্তানে আটটি নমুনার পরীক্ষার বিপরীতে একজন শনাক্ত হয়। আর ভারতে সেই সংখ্যাটা ২১।
ভিয়েতনামে ৮৪০ নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে একজন শনাক্ত হয়। ভুটানে ৫৩৩টি নমুনা, নেপালে ১৫৬টি নমুনা, থাইল্যান্ডে ১২২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয় একজন করোনা রোগী শনাক্ত করার বিপরীতে। যা করোনাভাইরাস মোকাবেলা করা জন্য ভালো পদক্ষেপ।
যদিও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাবি করেন, মৃত্যু এবং আক্রান্তের দিকে দিয়ে বাংলাদেশ ইউরোপ ও আমেরিকার চেয়েও অনেক ভালো করছে। যদিও প্রতিবেশী ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর এই তথ্য সেই দাবির বিপরীত চিত্র তুলে ধরে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে ১৭ ৬৪ জন। এতে করে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪ হাজার ৬০৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৬১০ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ৯৩৭৫ জন।
সূত্র : নিউ এজ
বাংলা/এনএস
আপনার মন্তব্য লিখুন