‘তামাক কোম্পানির কূটচাল রুখে দাও, তামাক ও নিকোটিন থেকে তরুণদের বাঁচাও’ স্লোগানকে সামনে রেখে সারাবিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। দিবসটি উপলক্ষ্যে তরুণ সমাজের জন্য হুমকি ই-সিগারেট নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে তামাক বিরোধী ১১টি সংগঠন।
৩১ মে, রবিবার তাদের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রজন্মকে নেশায় আসক্ত করতে ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস (ভ্যাপিং, ই-সিগারেট) একধরনের নতুন পণ্য। তামাক কোম্পানিগুলো সুকৌশলে তরুণদের এই পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করতে প্রচারণা করে যাচ্ছে। প্রতিবছর তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে ১ লক্ষ ২৬ হাজার মানুষ মারা যায়, এই ভোক্তাদের শূন্যস্থান পুরন করতে তরুণরাই তামাক কোম্পানির মূল লক্ষ্য। আমরা আজ বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসে দেশের তরুণদের রক্ষায় ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস (ভ্যাপিং, ই-সিগারেট) জাতীয় পণ্য নিষিদ্ধ করাতে সরকারের কাছে আহবান জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক আর্ন্তজাতিক সংস্থা দ্য ইউনিয়ন প্রকাশিত Union Position Paper on E-cigarettes and HTP sales in LMICs শীর্ষক একটি পজিশন পেপার উল্লেখ করেছে, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের তরুণরা এখন তামাক কোম্পানির মূল লক্ষ। ফলে তারা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে ই-সিগারেট নিষিদ্ধের সুপারিশ করে। দ্য ইউনিয়নের টোব্যাকো কন্ট্রোলের পরিচালক ড. গ্যান কুয়ান জানিয়েছেন, অধিকাংশ দেশগুলো তামাকজনিত মহামারীর সমস্যার মোকাবেলা করছে, এ অবস্থায় এ ধরনের নতুন আসক্তিকর পণ্য স্বাস্থ্য সেবার সমস্যাকে আরো প্রকট করবে এবং আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি এফসিটিসি-র বাস্তবায়নকে বিলম্বিত করবে।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত “তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুন হুমকি : ই-সিগারেট” শীর্ষক অনুষ্ঠানে মাননীয় সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আমেরিকায় ই-সিগারেটকে মহামারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অনেকে। আমাদের দেশে এখনও ই-সিগারেট ব্যবহারকারী খুবই কম। সুতরাং আমাদেরকে এখনই ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা উচিত।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী জনাব সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ই-সিগারেট তরুন-যুবকদের আসক্ত এবং অসুস্থ্য করার একটি নতুন পন্য। তরুণ প্রজন্মের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এর ব্যবহার, বিপণন, সম্প্রসারণ নিষিদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির কেন্দ্রীয় কার্যকারী কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, ” ই-সিগারেট কোন অবস্থাতেই নিরাপদ নয়। সাধারনত ই-সিগারেটের ক্ষতি সম্পর্কে অভিবাবকরা জানেন না বলে কিছু তরুন তরুনিরা তা ব্যবহার করেছে।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের পরিচালক জনাব ইকবাল মাসুদ বলেন, ‘ই-সিগারেট যারা উৎপাদন করে তারা অনেকগুলো মিথ্যা তথ্য সচেতন ভাবে গণমাধ্যমে প্রচার করেছে। তামাক কোম্পানি এ মিথ্যাচারগুলো উম্মোচন করে দিতে হবে।’
দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক (বাংলাদেশ) এ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘ই-সিগারেট বিশ্বের ২৪টির বেশি দেশ নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশেও এ পণ্য নিষিদ্ধে আইন করা জরুরি করা। দ্রুততম সময়ে রাজস্ব বোর্ডের এইআর কোড হতে এ পণ্য সরানোর পাশাপাশি অনলাইনের যে সকল প্রতিষ্ঠান বিক্রিয় করছে তাদের সাইটগুলো বন্ধ করতে হবে।’
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির গবেষণা সেল টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) এর গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে তরুণদের আকৃষ্ট করতে ই-সিগারেট দোকানগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক (তথা আছে পাশে) গড়ে তোলা হয়েছে। তরুণদের আকৃষ্ট করতে তারা অবৈধভাবে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন তৈরি করছে। ইউটিউব, ফেসবুক, ওয়েবসাইট ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে ই-সিগারেট নিষিদ্ধে এই বিবৃতি দেয়া ১১টি সংগঠন হলো ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) ও এর গবেষণা সেল টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), এইড ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা), বাংলাদেশে ক্যান্সার সোসাইটি, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি, নাটাব, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাষ্ট এবং বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)।