বাংলাদেশ সীমান্তে বিপুল পরিমাণে সমরাস্ত্র মজুদ করে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে মিয়ানমার। রাখাইন রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেছে দেশটি। তবে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশকে চাপে রাখার জন্যই সামরিক শক্তি বৃদ্ধির কারণ বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
জানা গেছে, সীমান্তের এক কিলোমিটারের মধ্যে সেনা ক্যাম্প বানিয়েছে মিয়ানমার। এর মধ্যে দুইটা ফ্রিগেড, একটি কর্ভেড এবং একটি সাবমেরিন রাখাইন পানিসীমায় মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সিস্টেম ও এন্টি এয়ারক্রাফট সিস্টেমও মোতায়েন করা হয়েছে। একই সঙ্গে অবৈধ ফসফরাস বোমাও রাখাইনে নিয়ে এসেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
এমন সময় মিয়ানমারের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করার খবর প্রকাশ পেলো, যখন রাখাইনে নতুন করে আরো যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বলে দাবি করেছে জাতিসংঘ। চলমান সেনা সংখ্যা বৃদ্ধির সময়েই রাখাইনে একের পর এক গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বলেও জানায় জাতিসংঘ। তবে জাতিসংঘের এসব রিপোর্ট দেয়ার আগে যাচাই করে নেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছে মিয়ানমার।
তবে মিয়ানমার সরকারের এই বক্তব্যের সঙ্গে ওই এলাকার বাস্তবতার কোনো মিল পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাখাইনে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার একাধিক ছবি প্রকাশ করেছে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী। এছাড়া আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিও এ বিষয়ে একটি ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ করেছে।
স্থানীয় সূত্র মতে, রাখাইনের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির সঙ্গে সৃষ্ট উত্তেজনার কথা বলে মিয়ানমার সামরিক প্রস্তুতি নিচ্ছে। যা অনেকটা যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো। রোহিঙ্গা ইস্যুতে এখন আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে রয়েছে মিয়ানমার। ঢাকা যেন আন্তর্জাতিক এই শক্তির সঙ্গে এক হয়ে না যায়, সেজন্য বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে মিয়ানমার এমন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে বলে ধরাণা বিশেষজ্ঞদের।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সীমান্তের ১ কিলোমিটারের মধ্যে সেনা ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করছে মিয়ানমার। এছাড়া রাখাইনে তিনটি সেনা ডিভিশনের বাইরে ওয়েস্টার্ন কমান্ডের অধীনে আরেকটি অনানুষ্ঠানিক ডিভিশন নিয়ে এসেছে। এই কমান্ডের অধীনে ৫৪০, ৫৩৮, ৩১৭, ৫৩৮, ৩৬৬, ৫৪ ও ৫৫ ইনফেন্ট্রি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। এছাড়াও ১১ ও ৩৩ ডিভিশনের শক্তি আরো বাড়ানো হয়েছে।
আরো জানা গেছে, মংডু, বুচিডং, মংডু টাউনশিপ, ফকিরাবাজার, রাসিডং এলাকায় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে মিয়ানমার। এখানে ইনফেন্ট্রি ও আর্টিলারি ব্যাটালিয়নের সঙ্গে ৩৪ স্পেশাল ম্যাকানাইজড ইনফেন্ট্রি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হয়েছে।
মিয়ানমারের এই সামরিকশক্তি বৃদ্ধির ঘটনায় সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ছে। প্রধানত সীমান্তের এপারে আশ্রয় গ্রহণ করা রোহিঙ্গারা তাদের আত্মীয়-স্বজনদেন নিয়ে চিন্তিত। কারণ এসব আত্মীয়-স্বজন ওপারের বিভিন্ন অস্থায়ী আশ্রয়শিবির ও বাড়িঘরে অবস্থান করছেন। কিন্তু এই সামরিকশক্তি বৃদ্ধির তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে।