সকল সাফল্যের পেছনেই থাকে হাজারো ব্যর্থতার গল্প। জয়ের হাসির আড়ালেই লুকিয়ে থাকে পরাজয়ের অজস্র বেদনা। সকলের মতো এমনই জীবন পার করে সাফল্যের চূড়ায় এসেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের ওপেনার তামিম ইকবাল খান। আজ যিনি জাতীয় দলের একাদশে অটোমেটিক চয়েজ, সেই তিনিই একসময় ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগে দল না পেয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে কেঁদেছিলেন।
ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে এক লাইভ সেশনে গতকাল ৬ জুন, শনিবার রাতে নিজের জীবনের এই বেদনাঘন অধ্যায়ের কথা জানান তামিম।
চট্টগ্রামের বিখ্যাত ক্রীড়া পরিবারে জন্ম নিলেও তামিমের পথচলাটা মসৃণ ছিলনা মোটেও। বাবা ইকবাল খান ক্রিকেট-ফুটবল দুটোই খেলতেন। আর চাচা আকরাম খান আইসিসি ট্রফি জয়ী জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বড় ভাই নাফিস ইকবালও জাতীয় ক্রিকেট দলে ওপেনার হিসেবে খেলেছেন। এই পরিবারের ছোট ছেলে হিসেবে তামিমের ক্যারিয়ারের পথচলা সহজ ছিলো বলে অনেকেই ধারনা করেন। তবে এসব ধারণা একেবারেই ভুল। তার সাফল্যের পেছনে রয়েছে বহু অজানা গল্প, যার অনেকই হতাশায় আর বেদনায় ভরা।
গতকাল রাতে ক্রিকফেঞ্জির লাইভে তারই একটি শোনান তামিম। ক্যারিয়ার শুরুর আগে তিনি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলতে চট্টগ্রাম থেকে আসেন তিনি। তখন কোনো দল তাকে চুক্তিভুক্ত না করায় হতাশ তামিম রাজধানীর ইস্টার্ন প্লাজার সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে কেঁদেছিলেন।
তামিম বলেছেন, ‘তখন প্রিমিয়ার লিগে দল পেতে হলে সাইনিং করতে হতো। সাইনিং করতে না পারলে ঐ ক্রিকেটার আর সে বছর খেলতে পারত না। তো প্রিমিয়ার লিগের আগে মাত্র একদিন সময় পেয়েছিলাম আমরা। কেননা আমাদের স্কটল্যান্ড থেকে আসা একটি দলের সঙ্গে ম্যাচ ছিল চট্টগ্রামে। আমার ভাই (নাফিস ইকবাল) একটি দলে সাইনিং করে চলে গেছে। আমাকে বলল তুইও যোগাযোগ কর।’
তার কথা মোতাবেকই ঢাকায় এসে যোগাযোগ করেন একটি দলের সাথে। তাকে আরো ৫-৬ জন ক্রিকেটারের সাথে একটি মাইক্রেবাসে উঠানো হয়।
তামিম বলেন, ‘আমরা ৫-৬ জন একটা মাইক্রোতে উঠলাম, সাইনিং করতে যাওয়ার জন্য। ইস্টার্ন প্লাজার সামনে ওরা আমাকে মাইক্রো থেকে নামিয়ে দেয়। আমি জিগ্যেস করলাম, কেন নামিয়ে দিচ্ছেন? ওরা বলল বিসিবির কোনো এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে।’
হতাশ তামিম তখন কিছু বুঝতে না পেরে বড়ভাই নাফিস ইকবালকে কল করেন। তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি ভাইকে ফোন দেই তখন। নাফিস ভাইয়া বলে, ওরা তোকে দলে নেবে না হয়তো। আমি তখন রাস্তায় ঐ জায়গায় দাঁড়িয়ে কান্না করি। পুরোপুরি কান্না চলে আসে আমার।’
অবশ্য এ বছরই তখন ঢাকা লিগের জনপ্রিয় ক্রিকেটার খালেদ মাহমুদ সুজনের মাধ্যমে সুযোগ পেয়ে যান লিগের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ওল্ড ডিওএইচএসে হয়ে খেলার। আর সেবার নিজের জাত চিনিয়ে স্থান করে নেন জাতীয় দলে। এরপরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের পথচলা শুরু করেন তামিম।
এ বিষয়ে তার ভাষ্য, ‘ঐ সময়ে যে আমি ওল্ড ডিওএইচএসে খেলতে পারব সেটা কল্পনাই করতে পারিনি। সুজন ভাই আমাকে নিয়ে যায়। ডিওএইচএস তখন চ্যাম্পিয়ন দল।’
ঐ দলে তখনকার জাতীয় দলের ওপেনাররা খেলেন দেখেও নিজের অনুশীলন চালিয়ে যান তামিম। তার সেই চর্চাই সাফল্য ডেকে আনে। তামিম বলেন, ‘এরপর কীভাবে যেন জায়গা পাই। ওই টুর্নামেন্টের পর জাতীয় দলেও খেলি।’
ক্যারিয়ারের শুরুতেই সেই বেদনাঘন ঘটনা বেশ দাগ কেটে যায় তামিমের মনে। বছর কয়েক আগেও ইস্টার্ন প্লাজার সামনের সেই সড়কে গিয়ে মনে করেন সেই ঘটনা কথা। তামিম বলেন, ‘কয়েক বছর আগে আমি আবার ইস্টার্ন প্লাজার সামনে যাই। তখন ওই জায়গাটায় আমি একটু দাঁড়াই। চিন্তা করি ওইদিনের কথা।’
বাংলা/এসএ/
আপনার মন্তব্য লিখুন