সম্প্রতি বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়ে কৃষাঙ্গ আফ্রিকান-আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পরে পুরো আমেরিকা উত্তাল হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি সে আন্দোলন ছড়িয়েছে ইংল্যান্ডেও। পুরো বিশ্ব হতবাক হয়েছে এমন দুঃখজনক ঘটনায়। এরই মাঝে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি ভদ্রলোকের খেলা বলে পরিচিত ক্রিকেটে বর্ণবাদী আচরণের বোমা ফাটিয়েছেন। তার আগে ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে তিনি আইসিসিকে এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়ার আবেদন জানান।
প্রশ্ন হচ্ছে, ক্রিকেটে এই প্রথম কি এমন বর্ণবাদী ঘটনার অভিযোগ উঠলো? নাকি এর আগেও এমন ঘটনা আরো ঘটেছে? আমরা সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছি এ প্রতিবেদনে।
ইতিহাস বলছে এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। আসুন তাহলে জেনে নিই সেই সব নিন্দনীয় বর্ণবাদী ঘটনাগুলোর।
১. ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিয়ে টনি গ্রেগের বর্ণবাদী মন্তব্য : ১৯৭৬ সালে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক টনি গ্রেগ যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের ‘পদানত’ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন তখন তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিলো। ‘আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ … যদি তারা নীচু, তারা পদানত ছিলো এবং আমি তাদের পদানত করার পরিকল্পনা করেছি…।’
‘পদানত’ শব্দটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের লোকদের জন্য খুবই অপমানকর বিষয়। কারণ তাদের পূর্বপুরুষদের অনেকেই দাস ছিল। ফলে এ নিয়ে তখন প্রচণ্ড হৈচৈ শুরু হয়েছিলো। বিশেষত দক্ষিণ আফ্রিকান টনি গ্রেগ, যিনি সাদা চামড়ার এমন মন্তব্য বর্ণবাদী মানসিকতার না হয়ে পারে না।
২. ডিন জোন্সের চোখে আমলা ‘সন্ত্রাসী’ : ২০০৬ সালের মে মাসে কলম্বোয় শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার চতুর্থ দিনের খেলায় সরাসরি টিভিতে বর্ণবাদী মন্তব্য করেছিলেন অস্ট্রেলীয় কমেন্টেটর ডিন জোন্স । এ নিয়ে তখন ব্যাপক হট্টগোল সৃষ্টি হয়েছিলো। লঙ্কান ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারা যিনি হাশিম আমলা হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছিলেন তখন ধারাভাষ্যকার জোন্স আচমকা বলে ওঠেন, ‘the terrorist has got another wicket’ অর্থাৎ কিনা ‘সন্ত্রাসী আরো একটি উইকেট পেয়েছে।’ অবশ্য এর ফলে জোন্সকে দ্রুত ধারাভাষ্য প্যানেল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
৩. অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসকে ‘বানর’ বলেন হরভজন : ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে সম্ভবত আধুনিক ক্রিকেটের সবচেয়ে খারাপ বিতর্কটি দেখলো পুরো বিশ্ব। ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যেকার সিডনি টেস্টের তৃতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসকে ‘বানর’ বলে অভিহিত করেন ভারতীয় অফ স্পিনার হরভজন সিং।
তবে, এর জন্য হরভজনকে মাশুল গুনতে হয়েছিলো। ম্যাচ রেফারি মাইক প্রক্টর তাকে তিন টেস্টের জন্য নিষিদ্ধ করেন। সেইসাথে ম্যাচ ফি’র ৫০ শতাংশও জরিমানা করা হয় তাকে।
৪. মইন আলীকে ‘ওসামা’ সম্বোধন : ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার মইন আলি অভিযোগ করেন যে অস্ট্রেলিয়া দলের একজন সদস্য তাকে ‘ওসামা’ বলে ডেকেছে। ২০১৫ সালে কার্ডিফে অ্যাশেজ চলাকালীন এ ঘটনা ঘটেছিলো।
মইন পরে তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘একজন অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড় মাঠে আমার দিকে এসে বললেন, “ওসামা ওটা নিয়ে যাও।” আমি এটা শুনে বিশ্বাস করতে পারিনি। মনে পড়ে, এটা শুনে আমি সত্যিই রেগে লাল হয়ে গেয়েছিলাম। আমি কখনো ক্রিকেটের মাঠে এতটা রেগে যাইনি।’
৫. ফেলুকাওয়াকে সরফরাজ বললেন ‘কালো লোক’ : ২০১৯ এর জানুয়ারি ডারবানে দ্বিতীয় ওয়ানডে চলাকালীন পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যান্ডিল ফেলুকাওয়াকে নিয়ে বর্ণবাদী মন্তব্য করেছিলেন। সরফরাজ বলেন, ‘আরে কালো লোক, তোমার মা আজ কোথায় বসে আছে? তিনি আজ তোমাকে কি বলে পাঠিয়েছেন?’ অবশ্য সরফরাজ পরে ফেলুকাওয়ার সাথে দেখা করে ক্ষমা চেয়েছিলেন।