প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে মহামারীর কারণে রাজস্ব আদায় সংকুচিত হয়ে পড়ায় ‘ঋণ নির্ভর’ এই বাজেট বাস্তবায়ন করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা।
বিশ্বজুড়েই করোনা সংকট থাকায় আগামী অর্থবছরে সরকারের উচ্চাভিলাসী ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলেও মনে করেন তারা। ১১ জুন, বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন অর্থমন্ত্রী।
এই বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরকে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
বেসরকারি থিংক-ট্যাঙ্ক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই)’র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে নতুন প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন করা খুব কঠিন হবে। রাজস্ব আদায়ের সম্পদ কোথায়? এ বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না কারণ এনবিআর গত বছরই ২ লাখ ১৫ হাজার কোটির মতো টাকা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিল। তারা কীভাবে মহামারির মধ্যে এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে?’ প্রশ্ন রাখের তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু ইতিবাচক বিষয়ও রয়েছে- সরকার স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা নেট এবং কৃষির উপর জোর দিয়েছে। তবে সাফল্য মাঠপর্যায়ের কাজের ওপর নির্ভর করবে।’
করোনা পরিস্থিতিতে সরকার কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একবার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলো তারা চলমান পরিস্থিতিতে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পরে আবার বলা হলো যে, সরকার আরো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।’
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনোমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, এ বছরের বাজেটের লক্ষ্য হওয়া উচিত মহামারী দ্বারা উদ্ভূত অপ্রত্যাশিত স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রত্যক্ষ করছি। এছাড়া প্রতিনিয়তই করোনা আকান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। কবে নাগাদ পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে সেটিও একটি বড় প্রশ্ন।’
দেশের প্রধান আয়ের উৎস রপ্তানি ও রেমিট্যান্স নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে ড. রায়হান বলেন, ‘আমাদের রপ্তানির বৃহত্তম দুটি গন্তব্য- ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং উত্তর আমেরিকায় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এসব অঞ্চলের দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়বে কিনা এবং বাড়লেও কী পরিমাণে বাড়বে, সেটি একটি প্রশ্ন।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক ড. মো. মাহফুজ কবির বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে সামগ্রিক বাজেটের ঘাটতি হবে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ শতাংশ।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ঘাটতি খারাপ নয়। কাজ না থাকায় অনেক বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন। তাই সরকারকে আরো বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার কথা বিবেচনা করতে হবে কারণ লকডাউনের সময় অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছে।’
অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ আরো বলেন, ‘অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় আরো বিনিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ কীভাবে আকৃষ্ট করা যায় সরকারের তা চিন্তা করা উচিত।’ নতুন বাজেট বাস্তবায়নের জন্য একটি পরিপূরক বাজেটের প্রয়োজন হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সূত্র: ইউএনবি
বাংলা/এনএস