সিরিয়ার মূদ্রার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এতে ৯ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের এই দেশটির অর্থনৈতিক সঙ্কট আরো ঘনীভূত হয়েছে। সেখানে খাদ্যের দাম এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ফলে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতনের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে দেশটিতে এ সপ্তাহে স্বোয়েডা শহরে ২০১১ সালের আরব বসন্তের মতো বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এই শহরে টানা কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ হচ্ছে। সেখান থেকে প্রেসিডেন্ট বাশারের পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। তাদের দাবি, দেশে ভয়াবহ দুর্নীতি যুক্ত হয়েছে। এজন্য বাশারের সবচেয়ে অনুগত সমর্থকরা এখন তার বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছেন। এমন খবর প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান।
বিক্ষোভকারীরা জানান, আমরা বাঁচতে চাই না। তবে মরতে চাই মর্যাদার সঙ্গে। যে ব্যক্তি তার দেশবাসীকে অভুক্ত রাখেন তিনি বিশ্বাসঘাতক।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসসহ নানামুখী লড়াইয়ের মুখে আসাদ। এছাড়াও দেশটির সবচেয়ে ধনী তার আত্মীয় রামি মাখলুফের সঙ্গে শত্রুতাও রয়েছে তার। এর মধ্যে মস্কো ও তেহরানের সমর্থকদের স্বার্থ রক্ষায় সমতা রক্ষা করে চলা। এর মধ্যে সিরিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে অবরোধ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যা আগামী সপ্তাহ থেকে কার্যকর হবে। এতে দেশটির অর্থনীতি একেবারে শেষ হওয়ার আশঙ্কা যেমন আছে, তেমনি অস্থিরতাও আরো বাড়বে।
এদিকে প্রতিবেশি লেবাননে যে আর্থিক টালমাটাল অবস্থা চলছে সেটা প্রেসিডেন্ট আসাদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা। কারণ সিরিয়ার অর্থনীতি একেবারে মিইয়ে যাওয়া থেকে রক্ষায় সহায়তা করেছে এই দেশটি।
সম্পতি সময়ে দেশটির মুদ্রার মান একেবারে তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে। কালো বাজারে সেখানে এক ডলারের দাম এ সপ্তাহে রেকর্ড ৩৫০০ পাউন্ডে গিয়ে ঠেকেছে। বছরের শুরুতে এক ডলারের দাম ছিল ৭০০ পাউন্ড। জীবনধারণের খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। আটা, চিনি, চাল ও ওষুধের মতো মৌলিক সেবার জিনিসগুলো পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। আর দেশটির শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। অন্যদিকে শাসকগোষ্ঠীর সন্তানরা তাদের স্পোর্টস কার, স্বর্ণালঙ্কার ও প্রযুক্তিগত গ্যাজেট প্রদর্শন করছে ইন্সটাগ্রামে।
জনগণের বিক্ষোভ লাঘব করার জন্য গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী ইমাদ খামিসকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট আসাদ। তা সত্ত্বেও শাসকগোষ্ঠীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে সমালোচনা জোরালো করেছে। সম্প্রতি সরকারি নীতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা করছেন এমপি, ব্যবসায়ী নেতারা ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
অধিকারকর্মী শোয়েব রিফাই বলেন, যখন আপনার সন্তান ক্ষুধার্ত থাকে, তখন আপনি কোনো শক্তিধর ব্যক্তির কথা ভাববেন না। আপনি তখন ভাববেন না রাশিয়া কি চায়। ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি তখন আপনাকে বিচলিত করবে না। তখন আপনি ওই ব্যক্তিকে দায়ী করবেন, যিনি চার্জে আছেন। এখন আমি সেটা প্রতিদিনই দেখতে পাচ্ছি। গড়পরতায় সরকারের অনুগত ব্যক্তিরাও এখন কথা বলতে শুরু করেছে। আসাদের সবচয়ে বড় ঝুঁকি হলো পুতিন কি চান, ইরান কি চায়, সে বিষয়ে আর আমলে না নেয়া। এখন বিষয়টি হলো তার নিজের দেশবাসীর, যারা একটি প্রেসার কুকারের ওপর বসে আছেন।
বাংলা/এনএস